Breaking Ticker

মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম ( Sri Ram ) এবং রাম মন্দির ( Ram Mandir ) এর এই বিষয়গুলি প্রত্যেক হিন্দুদের জেনে রাখা দরকার।

প্রিয় সনাতনী ভক্তরা , আপনাদের সবাইকে Sanatan Sikkha তে স্বাগত জানাই। আজকের পোস্টে আমি মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম ( Sri Ram ) এবং রাম মন্দির ( Ram Mandir ) নিয়ে কিছু কথা বলবো যা প্রত্যেক হিন্দুদের জেনে রাখা দরকার। যদি আপনাদের কোনো কিছু বলার থাকে তাহলে আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন। তাহলে চলুন শুরু করি।


sri ram and ram mandir
sri ram and ram mandir

মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম ( Sri Ram ) সূর্য বংশে জন্ম গ্রহন  করেছিলেন। রাজা দশরথ ছিল তার পিতা। রাজা দশরথ তিনটি বিবাহ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রভু শ্রীরামের তিনটি মাতা ছিল। যথা : কৌশল্লা, কৈকেয়ী এবং সুমিত্রা। তারা চার ভাই ছিলেন যথা : রাম, লক্ষন, ভরত ও শত্রুঘ্ন । একে একে সবকিছু আলোচনা করা হবে। শুধু আপনারা সঙ্গে থাকবেন।


শ্রীরাম / Sri Ram :

প্রাচীনকালে অযোধ্যার রাজা ছিলেন দশরথ। তার তিন রানি ছিল। বড়রানি কৌশল্লা, মেঝোরানি কৈকেয়ী আর ছোটরানি সুমিত্রা। তিন রানির চার ছেলে। যথা : রাম, ভরত, লক্ষণ এবং শত্রুঘ্ন। বড়রানি কৌশলার ছেলে ছিল শ্রীরাম ( Sri Ram ), মেঝোরানি কৈকেয়ীর ছেলে ছিল ভরত এবং ছোটরানি সুমিত্রার ছেলে ছিল লক্ষণ ও শত্রুঘ্ন। রাজা দশরথের কাছে তার চার ছেলেই ছিল খুব প্রিয়। তার বড়ো ছেলে শ্রীরাম চন্দ্রের সঙ্গে মিথিলার রাজা জনকের মেয়ে সীতার বিবাহ হয়।


রামায়ন / Ramayan :

নিয়ম মতো দশরথের বড়ো ছেলে শ্রীরাম ( Sri Ram ) চন্দ্রের অযোধ্যার রাজা হওয়ার কথা তথা সিংহাসনে বসার কথা। কিন্তু বাদ সাধলেন মেঝোরানি কৈকেয়ী। রাজা দশরথ তাকে দুটি বর দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাই সুযোগ পেয়ে সময়মতো মেঝোরানি কৈকেয়ী দশরথের কাছে বর চেয়ে নেন। তিনি দশরথকে বলেছিলেন রাম চন্দ্রকে ১৪ বৎসরের জন্যে বনবাসে পাঠাতে হবে এবং তার ছেলে ভরতকে অযোধ্যার সিংহাসনে বসাতে হবে। পিতৃসত্য পালন করার জন্যে রামচন্দ্র বনবাসে যান। সঙ্গে যান তার পত্নী ও তার ভাই লক্ষণ। তারা পঞ্চবটি গিয়ে কুটির বেঁধে সেখানে বাস করতে থাকেন।


রাবন বধ :

তখন লঙ্কার রাজা ছিল রাবন। এবং তার বোন ছিল সুর্পনখা। একদিন সুর্পনখা পঞ্চবটি বলে বেড়াতে এসে প্রভু শ্রীরাম ( Sri Ram ) কে দেখেন। এবং বিবাহ করতে চান। এতে রামচন্দ্রের ভাই লক্ষণ রেগে গিয়ে তরোয়াল দিয়ে সুর্পনখার নাক ও কান কেটে দেন। এতে লঙ্কার রাজা রাবন প্রচন্ড রেগে যান। তিনি ব্রাহ্মনের ছদ্মবেশে এসে সীতাকে হরন করে লঙ্কায় নিয়ে যান। তখন রামচন্দ্র ও তার ভাই লক্ষন কিস্কিন্ধার রাজা সুগ্রীবের সাথে বন্ধুত্ব করেন। সেখানে রামচন্দ্র সুগ্রীদের সাহায্যে এক বিশাল বানর সেনা তৈরি করে লঙ্কায় যান। লঙ্কায় গিয়ে রাবনের সাথে যুদ্ধ করে রাবনকে বধ করেন এবং সীতাকে উদ্ধার করেন।


sri ram and ram mandir
ramayan

সীতার অগ্নিপরীক্ষা :

১৪ বৎসর পরে, প্রভু শ্রীরাম ( Sri Ram ) সবাইকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। তখন রামচন্দ্র অযোধ্যার রাজা হল। কিন্তু প্রজারা দেবী সীতাকে পছন্দ করলো না কারন তিনি শত্রুর ঘরে বন্দী হয়েছিলেন। তাই সীতাকে রামচন্দ্র অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলেন। অগ্নি দেবী সীতাকে স্পর্শ করল না। অপবাদ, তবুও দেবী সীতার পিছু ছাড়লো না। তখন প্রভু শ্রী রামচন্দ্র দেবী সীতাকে আবার বনবাসে পাঠান ঋষি বাল্মিকির আশ্রমে।


লব ও কুশ :

দেবী সীতা ঋষি বাল্মিকির আশ্রমে বসবাস করতে থাকেন। কিছুদিন পর তাদের দুই যমজ পুত্র লব ও কুশের জন্ম হয়। লব ও কুশ ছিল পিতার মতোই ক্ষমতাশালী ন্যায় পরায়ন। কিছুদিন পর রামচন্দ্র তাদেরকে সেখান থেকে আবার অযোধ্যায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু এতেও প্রজাদের মন তুষ্ট হলোনা। প্রভু শ্রীরাম ( Sri Ram ) আবার দেবী সিতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলেন। কিন্তু এবার দেবী সীতা অগ্নিপরীক্ষা দেননি। কারন তিনি তার আত্মমর্যাদা হারাতে চাননি। তিনি তখন পৃথিবী মাতাকে স্মরণ করলেন। তখন ভূমি দু'ভাগ হয় এবং দেবী সীতা পাতালে প্রবেশ করেন ।


শ্রীরাম (Sri Ram ) এর প্রান বিসর্জন :

দেবী সীতার পাতালে চলে যাওয়ার শোক রামচন্দ্র সহ্য করতে পারলেন না। এই শোকে তিনি লবকে রাজ্যের ভার দিয়ে সুরয়ু নদীতে প্রান বিসর্জন দেন। এবং কুশ ছিলেন লবের সহকারী।


রাম শব্দের অর্থ কি ?

রাম শব্দের অর্থ আনন্দ। রাম নাম উচ্চারণ করলে আনন্দে ভরে ওঠে মন। রাম ( Sri Ram ) হলেন ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার।


"একবার রাম নাম নিলে যত পাপ হরে।

 মানুষের সাধ্য নেই তত পাপ করে"


অর্থাৎ, রাম নাম নিলে যত পাপ ক্ষয় হয়, মানুষ সারা জীবন ভোরেও ততটা পাপ করতে পারে না।


sri ram and ram mandir
sri ram

রাম নামের মহিমা :

রাম নামের গুনে দস্যু রত্নাকর, মহর্ষি বাল্মিকী নামে জগতে পরিচিত হন। তিনি প্রজাপতি ব্রহ্মা ও নারদের পরামর্শে রাম নাম উচ্চারণ করতে থাকেন। তিনি এতটাই পাপী ছিলেন যে, প্রথমে তিনি রাম নাম উচ্চারণ করতে পারতেন না। ফলে তিনি 'মরা মরা' নাম উচ্চারণ  করতে থাকে। এবং ধীরে ধীরে তা 'রাম রাম' নামে পরিবর্তন হয়। এইভাবে সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে রাম নামের গুনে দস্যু রত্নাকর মহর্ষি বাল্মিকী নামে জগতে পরিচিত হন। এই বাল্মিকী হলেন রামায়নের রচয়িতা।


রামকে পেয়ে বশিষ্ঠ ও বিশ্বামিত্র ধন্য হন।


রাম ( Sri Ram ) নামের গুনে ও তার চরন স্পর্শে  পাথররুপি অহল্যা অভিশাপ মুক্ত হন।


শর্বরী, হনুমান, জাম্বুবান ও বিভীষণ প্রভু শ্রী রামকে পেয়ে কৃতার্থ হয়েছিলেন।


 রাম নামের গুনে পাথরও সমুদ্রে ভাসে।


যখন যখন ধর্মের হানি ঘটে, অধর্ম বেড়ে যায়, তখন সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্যে ও দুষ্কৃতিদের বিনাশ করার জন্যে ভগবান নানা যুগে নানা অবতার রূপে আবির্ভূত হন। প্রভু রাম ( Sri Ram ) রাবন সহ অনেক অসুরকে বধ করে এই জগত সংসারকে অত্যাচার মুক্ত করেন। সুতরাং রামই হলো মুক্তি আর রামই হল পুণ্যের ধাম। তাই সবাই মিলে বলুন "জয় শ্রী রাম"।


সম্পর্কিত পোস্ট :


শ্রীকৃষ্ণ নামের মহিমার কথা জেনে নিন।

শ্রীহরি বিষ্ণুর দশ অবতারের কথা জেনে নিন।

শ্রীকৃষ্ণ ও বিষ্ণুর মধ্যে পার্থক্য কি তা জেনে নিন।


কিন্তু বর্তমানে রয়েছে বেশ কিছু রাম বিরোধী মানুষ। যাদের এক কথায় রাম বিরোধী অসুর বলা হয়। তাদেরকে ভয় পাবেন না এবং আতঙ্কিত হবেন না। কারন ধর্মের জয় চিরদিনই হয়ে থাকে। যারা সাহস দেখিয়ে রাম বিরোধী অসুরদের  সঙ্গে মোকাবিলা করে ধর্মের জয় করেছেন তাদেরকে জানাই আমার অন্তর থেকে কোটি কোটি প্রনাম।

রাম বিরোধী অসুরদের পরাজিত করে, ধর্মের জয় করার এমন একটি মহৎ উদাহরন হল অযোধ্যার রাম মন্দির নির্মান। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।



রাম মন্দির / Ram Mandir :

ইতিমধ্যে অযোধ্যায়, গত ২২ শে জানুয়ারি ২০২৪ সালে  প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রী রামচন্দ্রের মন্দির। ৫০০ বছর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং মোদির সহযোগিতায় নির্মিত হয় এই রাম মন্দির। এবং সেই মন্দিরে মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রের প্রান প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই আনন্দে প্রদীপ এবং আলো দিয়ে সেজে ওঠে সম্পূর্ণ অযোধ্যা নগর।


এই রাম মন্দির ( Ram Mandir ) প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু করুণ ইতিহাস। যা জানলে দুঃখে সত্যিই চোখ দিয়ে জল পড়বে। এই মন্দির নির্মানের পিছনে রয়েছে অজস্র শ্রমিকের রক্ত, মান সম্মান এবং সম্পদ। এর মধ্যে অনেক শ্রমিক রাম মন্দির নির্মানের দাবি কিংবা আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল না। এমনকি রাম মন্দির নির্মানের দাবি বা আন্দোলনের  বিন্দুমাত্রও ধারনা ছিল না তাদের। রাম মন্দির নির্মানের প্রচুর শ্রমিক ভারতীয় ছিলনা। শুধুমাত্র ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মিল থাকাতে তারা রাতারাতি দিয়েছেন রক্ত, হারিয়েছেন প্রান ও মান সম্মান, হারিয়েছেন সম্পদ এমনকি নিজের পায়ের তলার জমিও।


narendra modi
Narendra Modi

রাম মন্দির ( Ram Mandir ) নির্মাণের এই কঠোর ইতিহাস জেনে, রাম মন্দির নির্মাণের কথা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই রাম মন্দির নির্মানের পিছনে যাদের যাদের হাত রয়েছে বা সহযোগিতা রয়েছে তাদেরকে অন্তর থেকে জানাই শত কোটি প্রনাম। চলুন তাহলে এক নজরে দেখে নেই রাম মন্দিরের ছোট্ট একটি ভিডিও।



উপসংহার :

ভক্তগন, আজকের এই পোস্টে আমি প্রভু শ্রীরাম ( Sri Ram ) এবং রাম মন্দির ( Ram Mandir ) নিয়ে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করেছি। আপনাদের এই পোস্টটি কেমন লেগেছে আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন। আর এইরকম ধর্মীয় পোস্ট প্রতিনিয়ত দেখার জন্যে Sanatan Sikkha কে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। ধন্যবাদ। জয় শ্রী রাম।


FAQ :

চলুন এখন তাহলে আজকের পোস্ট সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা যাক...


অযোধ্যার রাম মন্দির কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

গত ২২ শে জানুয়ারি ২০২৪ সালে অযোধ্যার রাম মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।

মহর্ষি বাল্মিকি আগে কে ছিলেন?

মহর্ষি বাল্মিকি আগে এক দস্যু ছিলেন যার নাম ছিল রত্নাকর। তিনি প্রজাপতি ব্রম্মা ও নারদের পরামর্শে রাম নাম উচ্চারন করে, সর্ব পাপ হতে মুক্ত হয়ে মহর্ষি বাল্মিকি নামে জগতে পরিচিত হন।

রামচন্দ্র কেন বনবাসে গিয়েছিলেন?

প্রতিশ্রুতি রাখার জন্যে রাজা দশরথ অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার মেজোপত্নী কৈকেয়ীর চাওয়া দুটি বর দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। প্রথম বরটি হলো রামচন্দ্রকে ১৪ বছরের জন্য বনবাসে যেতে হবে। আর দ্বিতীয় বরটি হলো ভারতকে অযোধ্যার রাজা করতে হবে। তাই পিতৃসত্য পালনের জন্য রামচন্দ্র বনবাসে গিয়েছিলেন।

রাম ও রাবনের যুদ্ধ হয়েছিল কেন?

বনবাসে থাকার সময় লঙ্কার রাজা রাবনের বোন সুর্পনখা, রামচন্দ্রকে বিবাহ করতে চেয়েছিলেন। এতে রামচন্দ্রের ভাই লক্ষণ রেগে গিয়ে তরোয়াল দিয়ে সুর্পনখার নাক ও কান কেটে দেন। এতে লঙ্কার রাজা রাবন প্রচন্ড রেগে যান। তিনি ব্রাহ্মনের ছদ্মবেশে এসে সীতাকে হরন করে লঙ্কায় নিয়ে যান। সীতাকে উদ্ধার করার জন্যে রাম ও রাবনের যুদ্ধ হয়।

রামচন্দ্র সীতাকে বনবাসে পাঠান কেন?

রামচন্দ্র রাবনকে পরাজিত করে সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। তখন প্রজারা সীতাকে নানা অপবাদ দিতে থাকেন। কারণ সীতা শত্রু রাবনের কাছে বন্দী ছিলেন। তাই প্রজাদের মন রাখার জন্য রামচন্দ্র সীতাকে বনবাসে পাঠিয়েছিলেন।

সীতার পাতাল প্রবেশ হয়েছিল কেন?

বনবাসে লব কুশের জন্মের বেশ কিছুদিন পর রামচন্দ্র সীতাকে আবার অযোধ্যায় ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু প্রজারা এবারও তাকে অপবাদ দিতে থাকেন। তখন রামচন্দ্র সীতাকে আবার অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলেন। এতে সীতা অপমানিত বোধ করেন। এই দুঃখে সীতা পৃথিবী মাকে স্মরণ করেন। তখন ভূমি দুভাগ হয় এবং সীতা পাতালে প্রবেশ করেন।

রামায়নের রচয়িতা কে?

মহর্ষি বাল্মীকি হলেন রামায়নের রচয়িতা।

রাম নাম নিলে কি হয়?

রাম নাম নিলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এবং উদ্ধার হওয়া যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.