প্রিয় সনাতনী ভক্তরা, আজকের পোস্টে আপনারা জানতে চলেছেন Shivratri 2024 এর সময়সূচি এবং Shivratri ব্রত পালনের নিয়ম এবং Shivratri ব্রতর মাহাত্মর কথা সম্পর্কে। আসলে আমাদের দেশে শিবরাত্রি মোট ১২টি রয়েছে। তার মধ্যে থেকে ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের যেই চতুর্দশীতে শিবরাত্রি ব্রত হয়, লোকেরা সেই ব্রতকে বেশি গুরুত্ব দেয়। কারন এই দিনে নাকি শিব ও পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল। শিব চতুর্দশীর এই দিনটাকে গুরুত্ব দেওয়ার পেছনে রয়েছে আরও বেশ কিছু কারন। এক এক করে সব কিছু নিয়ে আলোচনা করা হবে। আপনারা সঙ্গে থাকবেন। Sanatan Sikkha র পক্ষ থেকে এই অনুরোধটি রইলো।
shivratri |
শিবরাত্রি :
ফাল্গুন মাসে কৃষ্ণ পক্ষে চতুর্দশীতে পালন করা হয় Maha shivratri ব্রত। লোকেরা পবিত্র মনে এবং ভক্তিসহকারে এই ব্রত পালন করে থাকে। এই দিনে, অলিতে গলিতে যত শিব মন্দির রয়েছে, সব যেন জেগে ওঠে। লাইট এবং প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয় প্রত্যেকটি শিব মন্দির। ওঁম নমঃ শিবায় এই মন্ত্রটি প্রত্যেকটি শিব মন্দিরে মধুর ভাবে বাঁজতে থাকে। এই দিনে শিবরাত্রি ব্রত পালন করলে স্বামী কামনা, পুত্র কামনা বা সন্তান কামনা, বিধবা খণ্ডন প্রভৃতি পূর্ন হয়ে থাকে। তাই নারীরা বিশেষ করে কুমারী মেয়েরা শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢেলে ও বেল পাতা দিয়ে শিব পূজা করে থাকে।
Shivratri ব্রতর মাহাত্ম কি শুধু এতটুকুই ? একদমই না। Shivratri ব্রতর রয়েছে আরও অনেক মাহাত্ম। একবার দেবী পার্বতী মহাদেব কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আচ্ছা মহাদেব কিভাবে পূজা দিলে আপনি বেশি খুশি হন ? মহাদেব বলেন Shivratri ব্রত পালন করে বেলপাতা দিয়ে আমার পূজা করলে আমি বেশি খুশি হই। ধন সম্পদ এমন কি সোনা দানা দিয়ে পূজা দিলেও আমি খুশি হই না। তারপর মহাদেব দেবী পার্বতীকে শিবরাত্রি ব্রতর মাহাত্মর কথা বলেন। মনোযোগ সহকারে দেখতে থাকুন। এক এক করে সবকিছুই আলোচনা করা হবে।
শিবরাত্রি ব্রত পালনের নিয়ম :
ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীর রাত্রিকে শিবরাত্রি বলা হয়ে থাকে। এই রাত্রিতে উপবাস করলে মহাদেব খুবই খুশি হন। স্নান, বস্ত্র, ধূপ, ও অর্চনাতে মহাদেব যতটা খুশি না হয়, তার থেকে বেশি খুশি হয় শিবরাত্রিতে উপবাস করলে। শিবরাত্রি ব্রত পালনকারীরা আপনারা জেনে নিন Shivratri ব্রত পালনের নিয়ম সম্পর্কে :-
ত্রয়াদশীতে স্নান করে সংযম করতে হবে।
নিরামিষ ভোজন করতে হবে। তারপর বালু বিছানায় কুশ বিছিয়ে নিদ্রা পূর্ন করতে হবে। পরের সকালে উঠে বাকি পূজার জন্যে বেলপাতা সংগ্রহ করবেন। ধূপ, পুস্প ও গন্ধ দিয়ে মহাদেবের অর্চনা করবেন। প্রহরে প্রহরে মহাদেবকে স্নান করাবেন। প্রথম প্রহরে দুধ দিয়ে, দ্বিতীয় প্রহরে দধি দিয়ে, তৃতীয় প্রহরে ঘৃত দিয়ে ও চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে স্নান করাতে হবে। তারপর বেলপাতা দিয়ে পূজা দিতে হবে। মনে রাখবেন, বেল পাতা দিয়ে পূজা দিলে মহাদেব যতটা খুশি হন মনি মুক্তা দিয়ে পূজা দিলেও মহাদেব কিন্তু খুশি হন না। এবং যথাশক্তি নৃত্য ও গীতাদি দ্বারা মহাদেবের প্রীতি সম্পাদন করতে হবে।
এইসব নিয়মে Shivratri ব্রত পালন করলে মহাদেব খুবই সন্তুষ্ট হন। এই হলো মহাদেবকে সন্তুষ্ট করার Shivratri ব্রত পালন করার নিয়ম। এবার আলোচনা করতে চলেছি Shivratri তথা Maha shivratri ব্রত কথা ও তার মাহাত্মর বিষয় নিয়ে। চলুন তাহলে শুরু করি।
Shivratri ব্রত কথা :
একদা এক অহংকারী ব্যাধ স্বপ্নপুরী বারানসীতে বাস করত। তার গায়ের রঙ ছিল কালো তার চেহারা বেটে খাটো থাকলেও ছিল তার নিষ্ঠুর আচরন। কারো প্রতি তার দয়া মায়া ছিল না। ওই ব্যাধের চোখ আর চুলের রং ছিল কটা। উনার বাড়ি জাল, ফাঁসের দড়ি ও পশু হত্যা করার হাতিয়ার দিয়ে ভর্তি ছিল। একদিন সে জঙ্গলে গিয়ে পশু হত্যা করেছিলেন। তারপরে সেই পশুর মাংস নিয়ে বাড়িতে রওনা দিলেন। রাস্তায় তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়ায় এক বৃক্ষের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আস্তে আস্তে সূর্য অস্ত গেল আর সেই ব্যক্তিও ঘুমিয়ে পড়ল। তিনি যেই গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই গাছটি ছিল বেল গাছ এবং সেই দিনটি ছিল শিব চতুর্দশীর দিন অর্থাৎ শিবরাত্রি ব্রত পালন করার দিন। আবার সেই বেল গাছের নিচে ছিল একটি শিবলিঙ্গ। জঙ্গলে ছিল জন্তু-জানোয়ারের ভয়। তাই ওই ব্যক্তি তার শিকার করা মাংস বেলগাছে বেঁধে রেখেছিল। জন্তু-জানোয়ারের ভয়ে তিনি গাছের উপরে শুয়েছিলেন। গাছে ওঠার সময় তার ঝাকুনিতে কয়েকটি বেলপাতা নিচে শিবলিঙ্গের উপরে পড়ে।
সেই দিন সেই ব্যাধ ছিল উপবাসে। সারা রাত্রি শিশির থাকায় তার সমস্ত শরীর ভিজে যায়। মনে করেন তার শিশির স্নান হয়ে যায়। গাছে ওঠার সময় গাছের ঝাঁকুনিতে কয়েকটি বেলপাতাও নিচে শিবলিঙ্গের উপরে পড়ে। এইভাবে ব্যাধের অজান্তেই তিনি পালন করে ফেলেন শিবরাত্রি ব্রত। পরের দিন তিনি যখন খাবার খাবেন, তখন এক অতিথি এসে তার বাড়িতে হাজির হয়। তিনি তখন তার সমস্ত খাবার তুলে দিলেন ওই অতিথির হাতে। এইভাবে ওই ব্যাধের পারনও সুসম্পূর্ণ হয়ে যায়। অজান্তেই এই সমস্ত ঘটনা ঘটে যাওয়ায় অগত্যা সেই ব্যাধ Shivratri ব্রতর সমস্ত ফল লাভ করেন।
অন্তিমে ব্যাধের কি হয়েছিল :
অবশেষে ব্যাধের আয়ু শেষ হলো। তার মৃত্যু হলো। মৃত্যুর পর তার আত্মাকে নিতে আসে যম দূত। কিন্তু সেইসময় শিবের দূত যম দূতের কাছে। তাদের দুজনের কথা হয়। কথাপকথনের পর সেই ব্যাধের আত্মাকে শিবলোকে নিয়ে যাওয়া হয়।
শিবলোকে যমরাজ আসে। এবং যমরাজ শিবের অনুচড় নন্দীকে বলে যে এই ব্যাক্তি সারাজীবন শুধু পাপ করেছে। এই কথা শুনে নন্দী যমরাজকে বলে আমি জানি উনি একজন দুরাত্মা। কিন্তু Shivratri ব্রতর পুন্য উনি অর্জন করেছেন। অবশেষে যমরাজ Shivratri ব্রতর মাহাত্ম জেনে সেখান থেকে চলে যান। এবং সমস্ত Shivratri ব্রত পালনকারীদের উপর থেকে নিজের অধিকার ত্যাগ করেন।
এইভাবে মহাদেব শিবরাত্রি ব্রতর মাহাত্ম্য বর্ণনা করলেন দেবী পার্বতীর কাছে। মহাদেবের মুখে ব্রত কথা শুনে দেবী পার্বতীও বিস্মিত হন। এবং দেবী পার্বতী এই ব্রতের মাহাত্ম ভক্তিসহকারে বর্ণনা করেন সমগ্র রাজাদের কাছে। ফলে Shivratri ব্রত ধীরে ধীরে পৃথিবীতে প্রচলিত হয়।
Shivratri ব্রতর মাহাত্ম :
এইদিনে মহাদেব লিঙ্গরূপ ধারন করেছিলেন। পুরাণ অনুযায়ী এই দিনেই দেবী পার্বতীর সাথে শিবের বিবাহ হয়েছিল। Shivratri র এই দিনে আকাশের গ্রহ এবং নক্ষত্রের স্থান বদলে যায় যাতে মানুষ আধ্যাত্মিক শক্তি এবং অন্যান্য শক্তি জাগ্রত করে তুলতে পারে। মহাদেব দেবী পার্বতীকে আরোও বলেছিলেন যে শিবরাত্রি ব্রত পালন করলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পেয়ে মোক্ষ লাভ করা যায়। এই দিনেই মহাদেব তান্ডব নৃত্য করেছিল এবং তা বিখ্যাত হয়ে যায়। শিবরাত্রি ব্রত শুধুমাত্র কুমারী মেয়েরাই নয়, বিবাহিত মহিলারা এবং ছেলেরাও এই ব্রত পালন করতে পারে। শুধু মহাদেবের মত স্বামী নয়, সাফল্য এবং সমৃদ্ধ চেয়েও এই ব্রত করা যায়। Shivratri ব্রত পালন করলে সমস্ত অশুভ শক্তির নাশ হয়। মহা shivratri ব্রত পালন করলে রজঃ গুণের এবং তম গুনের সংযম শক্তি বাড়ে। বলা হয়ে থাকে এই দিনে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করলে সমস্ত গ্রহ এবং নক্ষত্রের প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া আয়ু সংকট থেকেও বাঁচা যায়। আর মহা শিবরাত্রির ব্রতকথা শ্রবণ করলে শ্রোতারা মহাপূণ্য লাভ করে থাকেন।
Shivratri 2024 এর সময়সূচি :
২৪শে ফাল্গুন ১৪৩০ সনে শুক্রবার তথা 18ই মার্চ 2024 সালে মহা শিবরাত্রি ব্রত ও উপবাস পালন করার দিন।
শিবরাত্রি ২০২৪ এর সময়সূচি |
পরম বৈষ্ণব কে ?
মহাদেব হলো পরম বৈষ্ণব। তিনি কিন্তু আবার ত্রিমূর্তির একজন।
মহাদেবের মাথায় অর্ধ চন্দ্র থাকে কেন ?
কারন শিবরাত্রির দিন মহাদেব চন্দ্রদেবকে ক্ষয় হতে রক্ষা করেছিল, তাই মহাদেবের মাথায় অর্ধ চন্দ্র থাকে।
শিবরাত্রি কবে পালন করা হয় ?
প্রত্যেক বৎসরের ফাল্গুন মাসের, কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশীতে মহাশিবরাত্রি উৎসব পালন করা হয়।
উপসংহার :
আশাকরি আজকের পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। Shivratri ব্রত কথা নিয়ে যদি আপনাদের মনে কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে আমাকে জানাবেন। আমি কথা দিচ্ছি আমি যথা সম্ভব তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। আজকের পোষ্টটি পড়ে বোঝা গেল যে, আমাদের সবাইকে শিবরাত্রি ব্রত পালন করা উচিত। এতে মুখ্যলাভ করা যায় ঠিক ওই ব্যাধের মতো। ভালো থাকবেন। ওঁম নমঃ শিবায় ...