Breaking Ticker

Learn About 10 Avatars Of Lord Vishnu // ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতার কি কি ছিল ?

নমস্কার, সনাতন ধর্মের জয়। Sanatan Sikkha তে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই। সনাতন শিক্ষা একটি ধর্মমূলক ওয়েবসাইট। এই সাইটে শুধুমাত্র সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়। আজকের পোস্টে আমি 10 Avatars of lord vishnu / ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতার নিয়ে আলোচনা করবো। পাপকে বিনাশ করতে এবং ধর্মকে রক্ষা করতে তিনি যুগে যুগে অবতীর্ন হন। জগৎ যখন পাপীদের দ্বারা পাপে ভরে যায় তখন  vishnu সাধুদের রক্ষা করার জন্যে যুগে যুগে অবতার রূপ ধারন করে জগতে আবির্ভুত হন। তাহলে চলুন ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের সম্পর্কে জেনে নেই।

Vishnu
শ্রীবিষ্ণুর দশবতারের কাহিনী

10 Avatars of lord vishnu / ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতার : 

হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বিষ্ণুর দশ অবতারের কথা জানা যায়। তার দশমতম অবতার হলো কল্কি অবতার। কল্কি অবতার আবির্ভুত হওয়ার সময় কলিযুগে। কলিযুগে vishnu ঘোড়ায় চড়ে হাতে তরোয়াল নিয়ে আবির্ভুত হবেন। এবং সমস্ত পাপকে বিনাশ করে আবার সত্যযুগ নির্মান করবেন। বলে দেই কল্কি অবতার এখনো আবির্ভুত হয়নি। যখন সময় হবে তখন তিনি অবশ্যই আসবেন। তাহলে এবার জেনে নেই বিষ্ণুর দশ অবতারের নাম সম্পর্কে। 

১> মৎস অবতার, 
২> কূর্ম অবতার, 
৩> বরাহ অবতার, 
৪> নরসিংহ বা নৃসিংহ অবতার, 
৫> বামন অবতার, 
৬> পরশুরাম অবতার, 
৭> শ্রীরাম স্বয়ং ভগবান, 
৮> শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান, 
৯> বুদ্ধ অবতার, 
১০> এবং কল্কি অবতার। 

অবতার দুই রকমের হয়। যথাঃ আংশিক অবতার ও পূর্ন অবতার। আংশিক অবতার হলো ভগবানের সামান্য অংশ মাত্র। আর পূর্ন অবতার হলো ভগবানের সম্পূর্ন অংশ। অর্থাৎ শ্রীরাম এবং শ্রীকৃষ্ণ এরা স্বয়ং ভগবান। ১৬ কলা পূর্ন রূপে জন্ম নিয়েছেন। তাই এদের অবতার বলা যায় না। এরা স্বয়ং ভগবান। 

মৎস অবতার : 

হিন্দু পুরান অনুসারে মৎস অবতার হলো বিষ্ণুর প্রথম অবতার। এই অবতারে তার দেহের উপরিভাগ ছিল চতুর্ভুজ vishnu আর দেহের নিন্মভাগ ছিল মাছের মতো। কোনো একসময়ে দ্রাবিড় রাজ্যের এক রাজা ছিল সত্যব্রত নামে। অবশ্য তিনি পরবর্তীতে মনু নামে পরিচিত হন। তিনি ছিলেন একজন খাটি বিষ্ণুভক্ত। আর তাকে রক্ষা করার জন্যে শ্রীবিষ্ণু মৎস অবতারে আবির্ভুত হয়েছিলেন। একদিন রাজা সত্যব্রত নদীতে হাত ধুচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময়ে একটি মাছ তার হাতে এসে তার কাছে প্রান ভিক্ষা চেয়েছিলেন। রাজা তখন মাছটিকে নিয়ে ফিরে যান। তিনি মাছটিকে প্রথমে এক মাটির পাত্রে রাখেন। কিন্তু মাছটি দিন দিন বড়ো হতে থাকে। তাই রাজা পরে মাছটিকে পুকুরে তারপর নদীতে এবং শেষে সমুদ্রে ছেড়ে দেন। কারন মাছটি ক্রমশ বড়ো হতে থাকে আর এতোই বড়ো হয় যে বাধ্য হয়ে রাজা মাছটিকে সমুদ্রে ছেড়ে দেন। রাজা কিন্তু বুজতে পেরেছিলেন যে এটা কোনো সাধারন মাছ নয়। এই মাছ ভগবানের অংশ ছাড়া আর কিছু নয়। 

সমুদ্রে ছাড়ার পরে সেই মাছ মানে vishnu মৎস অবতারে রাজার সামনে আবির্ভুত হন আর রাজাকে বলেন যে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রলয় ঘটবে এবং সমস্ত জীবের বিনাশ ঘটবে। তাই শ্রীবিষ্ণু রাজা সত্যব্রতকে নির্দেশ দেন যে তিনি যেন সকল প্রকার ঔষধ, বীজ, সপ্তর্ষী, বাসুকি নাগ ও অন্যান্য প্রানিদের নিয়ে সেখান থেকে নৌকায় করে চলে যায়। এবং বাসুকি নাগকে তার শিঙ্গে নৌকার কাছি হিসাবে বাধঁতে বলেন। রাজা সত্যব্রত শ্রীবিষ্ণুর সকল আদেশ পালন করেন এবং তার কথামতো নৌকা করে সেখান থেকে চলে যান। ফলে তাদের প্রান বেঁচে যায়। এইভাবে মৎস অবতারে শ্রীবিষ্ণু মহাপ্রলয়ের হাত থেকে রাজা সত্যব্রতকে ও অন্যান্য প্রানিদেরকে রক্ষা করেছিলেন। 

কূর্ম অবতার : 

কূর্ম অবতার হলো শ্রীবিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার। vishnu সত্যযুগে কূর্ম অবতারে অর্থাৎ কচ্ছপের রূপ ধারন করে আবির্ভুত হন। ঋষি দুর্বাসার অভিশাপে দেবতারা তাদের অমরত্ব হরিয়ে ফেলেন। তখন তারা সাহায্যের জন্যে শ্রীবিষ্ণুর কাছে যান। তখন শ্রীবিষ্ণু তাদের মন্থনের কথা বলেন। কারন মন্থনের পরে যে অমৃত সুধা পাওয়া যাবে তা পান করে দেবতারা পুনরায় অমরত্ব ফিরে পাবে। কিন্তু মন্থন তো শুধু দেবতাদের পক্ষে করা সম্ভব নয় তাই তারা এই কাজে অসুরদের সহযোগিতা করতে বলেন। দেবতা ও অসুরদের মধ্যে সম্পর্ক কোনোদিনও ভালো ছিল না। কিন্তু মন্থনের কথা ও তার সাথে অমৃত সুধা ও অমরত্বের কথা শুনে অসুরেরা দেবতাদের সাথে মন্থন করতে রাজি হন। 

তারপর অসুর ও দেবতাদের মধ্যে ক্ষীরদসাগরে মন্থন হয়েছিল আর সেটা শুধুমাত্র অমৃত সুধার জন্যে। কারন এই মন্থনের পরে যে অমৃত ক্ষীরদসাগর থেকে উঠে আসবে, সেই অমৃত পান করলেই অমর হওয়া যাবে। আর দেবতা ও অসুররা তো এটাই চাইত। মহাদেবের বাসুকি নাগ ও শ্রীবিষ্ণুর কূর্ম অবতারের সাহায্যে মহাদেব ও শ্রীবিষ্ণু ক্ষীরদসাগরে মন্থন সম্পূর্ন হতে দেন। আবার মন্থন কিন্তু বাসুকি নাগ ও মন্দর পর্বত ছাড়া সম্পূর্ন হত না। কিন্তু মন্থন করার সময় মন্দর পর্বত বার বার সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছিল। তখন শ্রীবিষ্ণু কচ্ছপের রূপ ধারন করে সেই পর্বতের ভার নিজের পিঠে নিয়েছিলেন। আর মহাদেবের বাসুকি নাগ দিয়ে মন্দর পর্বতকে পেঁচিয়ে, তারপর একপাশে দেবতা ও আরেকপাশে অসুর মিলে টেনে টেনে পর্বতকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেখান থেকে অমৃত সুধা বার করেন। 

বরাহ অবতার : 

হিন্দু পুরান অনুযায়ী অসুরদের রাজা হিরণ্যকশিপুর ভাই হিরণ্যক্ষ হাজার হাজার বছর ধরে ব্রম্মাদেবের তপস্যা করে বর নিয়েছিলেন। যে, তাকে কোনো দেবতা, মানুষ, গন্ধর্ব, বা নারীশক্তি তাকে বধ করতে পারবে না। তিনি তার বরের অহংকারে পৃথিবীকে কোনো এক জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। মানে হিরণ্যক্ষ পৃথিবীকে হরণ করেন। পৃথিবী হরণ হওয়ার পর সমগ্র জগতের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় আর শুধু প্রলয় হতে থাকে। এই প্রলয় থেকে বাঁচার জন্যে পৃথিবী জলে ডুবে যায়। তখন পৃথিবীকে রক্ষা করার কথা ভাবতে ভাবতে ব্রম্মার নাক থেকে এক শুকরের জন্ম হয়। যার আকার ছিল বৃদ্ধাঙুলের মতো। কিন্তু পরে সেই শুকর বড়ো আকার ধারন করে এবং জলে লাফিয়ে পড়ে। তখন সেই শুকর বা বরাহ অবতারে vishnu হিরণ্যক্ষর সাথে যুদ্ধ করে। যুদ্ধে পরাস্ত হিরণ্যক্ষকে সুদর্শন চক্র দ্বারা শ্রীবিষ্ণু বধ করেন এবং পৃথিবীকে জলাশয়ের থেকে উদ্ধার করে জায়গা মতো রেখে দেন। এইভাবে শ্রীবিষ্ণু বরাহ অবতারের রূপে আবির্ভুত হয়ে পৃথিবীকে রক্ষা করেন। 

নরসিংহ বা নৃসিংহ অবতার : 

শ্রীবিষ্ণুর চতুর্ত অবতার হলো নরসিংহ বা নৃসিংহ অবতার। সত্যযুগে vishnu এই অবতারে আবির্ভুত হন। হিরণ্যক্ষর মৃত্যুর সংবাদ যখন হিরণ্যকশিপুর কাছে পৌছাল তখন তিনি তীব্রভাবে বিষ্ণু বিদ্বেষী হয়ে উঠেন। এবং তার মনে শ্রীবিষ্ণুর প্রতি প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে তার ভাই হিরণ্যক্ষর মৃত্যুর প্রতিশোধ তিনি নিবেন। তাই তিনি ব্রম্মার তপস্যা শুরু করেন। তার তপস্যায় সমস্ত বিশ্ব কেঁপে উঠে। হিরণ্যকশিপুর তপস্যায় সন্তুষ্ঠ হয়ে ব্রম্মদেব তাকে বর দিতে চান যে বল তোমার কি বর লাগে। তখন হিরণ্যকশিপু অমরত্বের বরদান চায়। ব্রম্মদেব বলেন এই বর দেওয়া সম্ভব নয় কারন এতে সৃষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি অন্য কিছু চেয়ে নাও। তখন হিরণ্যকশিপু বলেন ঠিক আছে আমাকে এমন বরদান দেন যাতে, কোনো দেবতা, মানুষ, কোনো পশু বা আপনার সৃষ্টি করা কিছুই যেন আমাকে বধ করতে না পারে। এমনকি না দিনে না রাতে, না ঘরে না বাইরে, না পৃথিবীতে না আকাশে, আমার মৃত্যু যেন না হয়। ব্রম্মদেব হিরণ্যকশিপুকে সেই বরদানই দিলেন। বরদান পেয়ে হিরণ্যকশিপু সমস্ত পৃথিবীতে জয়লাভ করেন। এবং দেবলোগ থেকে দেবতাদের তাড়িয়ে দেন। 

হিরণ্যকশিপুর চার পুত্র ছিল। আর সবথেকে ছোট পুত্র ছিল প্রল্লাদ। প্রল্লাদ ছিল একজন খাটি বিষ্ণুভক্ত। এই কথা যখন তার পিতা হিরণ্যকশিপু জানতে পারেন তখন তিনি প্রল্লাদকে বধ করার জন্যে খুব চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনোটাতেই কাজ হয়নি। কারন vishnu প্রল্লাদের সাথে ছিলেন। কথাই তো আছে যে "রাখে হরি মারে কে আর মারে হরি রাখে কে"। হিরণ্যকশিপু তার চতুর্থ পুত্র প্রল্লাদকে মেরে ফেলতে চাইছিলেন কারন সে বিষ্ণুভক্ত ছিল আর শ্রীবিষ্ণুকে হিরণ্যকশিপু নিজের শত্রু মনে করতেন। তাই হিরণ্যকশিপু প্রল্লাদকে মারার জন্যে অস্ত্রের ব্যাবহার করেছিল, বিষাক্ত সাপের দ্বারা দংশন করিয়েছিল, তীব্র বিষ খাইয়েছিল এমনকি হাত পা বেঁধে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই বিষ্ণুভক্ত প্রল্লাদ শ্রীবিষ্ণুর কৃপায় জীবিত ও সুস্থ থাকতেন। 

একদিন হিরণ্যকশিপু প্রল্লাদকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি যে তোমাকে মারার এতো চেষ্টা করছি কিন্তু তোমার কিছুই হয় না। তোমাকে কে বাচাচ্ছে ? প্রল্লাদ তখন বলেন আমাকে শ্রীহরি vishnu বাচাচ্ছেন। তারপর হিরণ্যকশিপু বলেন কোথায় তোমার বিষ্ণু ? উত্তরে প্রল্লাদ তিনি সব জায়গায় আছেন। এই কথা শুনে হিরণ্যকশিপু একটি পাকা খুটি দেখিয়ে বলেন এখানে তোমার বিষ্ণু আছেন ? ভক্তপ্রল্লাদ বলেন হ্যা আছেন। তখন হিরণ্যকশিপু সেই পাকা খুটি ভাঙেন। তারপরে সেইখান থেকে শ্রীবিষ্ণুর চতুর্ত অবতার নরসিংহের আবির্ভাব হয়। তার রূপ এমন ছিল যে না পশু, না দেবতা, আর না মানুষ। তাকে ব্রম্মদেবও সৃষ্টি করেননি। সেই অবতারের রূপে vishnu হিরণ্যকশিপুকে নিজের জানুর উপরে রেখে বধ করেন। অর্থাৎ পৃথিবীতেও না আর আকাশেও না। তখন ছিল সন্ধ্যাবেলা। না দিন না রাত। তাকে বধ করা হয়েছিল চৌখাটে মানে না ঘরে না বাইরে। এইভাবে শ্রীহরি বিষ্ণু নিরসিংহ অবতারে হিরণ্যকশিপুকে বধ করেন। হিরণ্যকশিপুর পরে বিষ্ণুভক্ত প্রল্লাদ রাজা হন এবং শান্তি ফিরে আসে। 

Vishnu র বামন অবতার : 

শ্রীবিষ্ণুর পঞ্চম অবতার হলো বামন অবতার। ত্রেতাযুগে তিনি এই অবতারে অবতীর্ন হয়েছিলেন। একসময় বিষ্ণুভক্ত প্রল্লাদের নাতি রাজা বলি ও দেবরাজ ইন্দ্রদেবের যুদ্ধ চলছিল। সেই যুদ্ধে বলি রাজা হেরে যায়। তখন তিনি অসুর গুরু শুক্রাচার্যের কাছে বলেন কি করলে ইন্দ্রদেবকে পরাস্ত করা যাবে। তখন গুরু শুক্রচার্য রাজা বলিকে বৃহস্পতি যজ্ঞ করার কথা বলেন। গুরুদেবের কথা শুনে রাজা বলি বৃহস্পতি যজ্ঞ করেন এবং তার সাথে ইন্দ্রদেবকে পরাস্ত করেন। তারপর ভয়ে ইন্দ্রদেব সেখান থেকে পালিয়ে শ্রীবিষ্ণুর শরণাপন্ন হন। vishnu ইন্দ্রদেবকে বলেন উচিত সময়ে তোমাদের দেবলোক ফিরিয়ে দিব। আবার অন্যদিকে রাজা বলি গুরু শুক্রাচার্যের কাছে গিয়ে বলেন গুরুদেব স্বর্গে জয়লাভ তো হলো কিন্তু এই জয়কে রক্ষা করবো কিভাবে ? তখন শুক্রচার্য রাজা বলিকে বলেন তোমাকে নিয়মিত যজ্ঞ করতে হবে। রাজা বলি গুরুদেবের আজ্ঞা পালন করেন এবং নিয়মিত যজ্ঞ করতে থাকেন। 

একবার রাজা বলি অস্বমেধ যজ্ঞ করার আয়োজন করেন। এবং বলেন এই যজ্ঞে যে জাই চাইবে তাকে তিনি টাই দিবেন। ঠিক সেই সময়ে Vishnu র বামন অবতার সেখানে এলেন। তার হাতে একটি বাঁশের ছাতা ছিল। রাজা বলি সেই বামনকে বললেন আপনার কি চাই বলেন আমি দিবো। সেই বামন বলেন আমাকে শুধু তিনপদ ভূমি দান করুন। শুক্রচার্য কিন্তু বুজতে পেরেছিলেন যে এই বালক স্বয়ং বিষ্ণু। তাই তিনি রাজা বলিকে তিনপদ ভূমি দিতে না করেন। কিন্তু রাজা বলি গুরুদেবের কথা শুনেননি। তিনি সেই বামন বলোককে তিনপদ ভূমি দেওয়ার সংকল্প করেন। জল দিয়ে সংকল্প করার সময়ে গুরু শুক্রচার্য ঘটির ভিতরে ঢুকে তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তখন বিষ্ণু অবতার বামন এক কাঠি দিয়ে ঘটির মুখে খুচা দেন এবং ঘটির মুখ খুলে যায়। তাতে শুক্রাচার্যের একটি চোখ কানা হয়ে যায়। তাই তিনি রাগ করে বলি রাজাকে ছেড়ে চলে যান। 

তারপর রাজা বলি জল দিয়ে সংকল্প করেন এবং সেই বামনকে তিনপদ ভূমি নিতে বলেন। তিনপদ ভূমি নেওয়ার জন্যে সেই বালক বিশাল আকার নিলো আর তার মাথা আকাশ ছুয়ে গেলো। তিনি এক পায়ে পৃথিবী এবং আরেক পায়ে স্বর্গ নিয়ে নিলো। কিন্তু আরেক পা কোথায় রাখবেন ? vishnu র এই লীলা দেখে রাজা বলি তার মস্তক এগিয়ে দেন সেই বামনের তৃতীয় পদ রাখার জন্যে। তখন সেই বামন আবার বালকের রূপ ধারন করে এবং বলির মাথায় এক পা রাখেন এবং তাকে পাতালে পাঠিয়ে দেন। শ্রীহরি বিষ্ণু রাজা বলির দয়া মেঝে খুশি হন এবং তাকে বলেন যে আজ থেকে তুমি সুথল নামক পাতালের রাজা হবে আর তুমি যে দুর্গ নির্মান করবে সেটা আমি জোনার্ধন রূপে রক্ষা করবো। কোনো একসময়ে তুমিও ইন্দ্র হবে। 

পরশুরাম অবতার : 

শ্রীবিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম ত্রেতাজুগে আবির্ভুত হয়েছিলেন। ত্রেতাযুগে যখন ক্ষত্রিয়দের উৎপাত বেড়ে যায় ছিল আবির্ভুত হন vishnu অবতার পরশুরাম। ক্ষত্রিয়দের অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেন তিনি। পরশুরামের পিতা ছিল ঋষি জমদগ্নি ও মাতা ছিলেন রেনুকাদেবি। কোনোেকদিন জমদগ্নির পুত্রের নিজেদের আশ্রম ছেড়ে ভ্রমণ করতে যায়। সেই সময়ে কার্তবির্জাজন নামে এক রাজা তার সেনাদের নিয়ে জমদগ্নির আশ্রমে বিশ্রাম করতে আসে। তখন আশ্রমের গোমাতা কামধেনু সুরভী তাদের জন্যে বিশ্রাম ও খাবারের ব্যাবস্তা করেন। কামধেনু শুরুভির কাজে সন্তুষ্ঠ হয়ে রাজা কার্তবির্জাজন ঋষি জমদগ্নিকে বলে আপনি এই কামধেনু সুরভীকে আমাকে দিয়ে দেন। কিন্তু মুনি জমদগ্নি এতে রাজি হন না। তিনি বলেন কামধেনু ছোট থেকে এই আশ্রমেই লালিত পালিত হয়েছে। আর কামধেনু সুরভী আমাদের জীবন যাত্রার একটি অঙ্গ। আমি কমধেনুকে আপনার হাতে তুলে দিতে পারবো না।তারপর রাজা কার্তবির্জাজন রেগে গিয়ে বলেন আমি রাজা, আমি ক্ষত্রীয় আমার শক্তি অপরিসীম। তুমি যদি আমাকে কামধেনু না দেও তাহলে আমি জোর করে নিয়ে যাবো। অবশেষে অনেক বাধা দেওয়ার পরেও রাজা কার্তবির্জাজন মুনি জমদগ্নির আশ্রম ভেঙেচুড়ে জোর করে রাজা কামধেনুকে নিয়ে যায়। 

এরপর জমদগ্নির পুত্ররা আশ্রমে ফিরে আসেন। এবং আশ্রমের অবস্থা দেখে মুনির চার পুত্র মূর্ছিত হয়ে পড়েন। আর মুনির কনিষ্ট ও পঞ্চম পুত্র পরশুরাম তার পিতা থেকে সকল ঘটনা শুনে একাই সেই রাজার সাথে যুদ্ধ করে তাকে বধ করেন। আবার vishnu অবতার পরশুরামের অনুপস্থিতে রাজা কার্তবির্জাজনের পুত্র মুনি জমদগ্নিকে হত্যা করেন। তারপর পরশুরাম রাজার পুত্রকে হত্যা করে তার পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেন। এর সাথে তিনি ক্ষত্রিয়দের প্রতি ভীষণভাবে রেগে যান। এবং তিনি ২১ বার পৃথিবীকে ক্ষত্রীয়হীন করেছিলেন। অবশেষে পরশুরাম তার পিতামহ রিচিকের কথা অনুযায়ী ক্ষত্রীয় হত্যা বন্ধ করেন। পরশুরাম ছিলেন একজন অস্ত্রধারী। তার থেকে অস্ত্র বিদ্যা নিয়েছেন মহামহিম ভীষ্ম, গুরু দ্রোনাচার্য ও তারপর কর্ন। 

vishnu অবতার শ্রীরাম : 

vishnu র সপ্তম অবতার শ্রীরামচন্দ্র ত্রেতাজুগে অযোধ্যায় জন্মগ্রহন করেছিলেন। তার পিতা ছিলেন রাজা দশোরথ ও মাতা ছিলেন কৌশল্লা। শ্রীরামচন্দ্রের যখন ১৪ বৎসর বয়স তখন ঋষি বিশ্বমিত্র রাজা দশোরথের অনুমতি নিয়ে রাম এবং লক্ষনকে তার আশ্রমে নিয়ে যান। তখন রামচন্দ্র তারকা রাক্ষসকে বধ করে ঋষি বিশ্বমিত্রের যজ্ঞ ভূমি সুরক্ষিত রাখেন। তারপর তিনি মিথিলায় হরধনু ভঙ্গ করে জনক রাজার পুত্রি সীতাদেবীকে বিবাহ করে। এবং লক্ষন সীতার ছোট বোন উর্মিলাকে বিবাহ করেন। 

এরপর রাজা দশোরথ রামচন্দ্রকে যুবরাজ করতে চাইলেন। সেই সময়ে দাসী মন্থরা মাতা কৈকির কানে বিষ ঢেলে দেন। তিনি বলেন যদি রাম রাজা হয় তাহলে ভরত কোনোদিনও রাজা হতে পারবে না। তাকে আজীবন রামের সেবা করতে হবে। এই কথা শুনে দেবি কৈকি রাজা দশোরথকে বলেন যে, রামকে ১৪ বসরের জন্যে বনবাস দিন আর ভরতকে অযোধ্যার রাজা ঘোষিত করুন। যেহেতু রাজা দশোরথ কৈকি দেবীকে কথা দিয়েছিলেন যে তিনি তার একটি আবদার রাখবেন সেহেতু রাজা দশোরথ বাধ্য হয়েছিলেন দেবি কৈকির কথা রাখতে। দেবী কৈকির কথা শুনে রাজা বাধ্য অসুস্থ হয়ে পড়েন। 

মাতা ও পিতার ন্যায়ের কথা ভেবে রাম, লক্ষন ও সিতা বনবাসে চলে যান। তারা বন ভ্রমণ করতে করতে পঞ্চবটি বনে উপস্থিত হলেন। সেই বনে রাক্ষসদের প্রচন্ড উৎপাত ছিল। রাক্ষসরাজ রাবনের বিধবা বোন সুর্পণখা রামের রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিবাহ করতে চাইলেন। রাম বারন করায় তিনি লক্ষনের কাছে গেলেন। রাক্ষস সুর্পণখা লক্ষনকে বিবাহ করতে চাইলে লক্ষন তার নাক কেটে দেন। তারপর সুর্পণখা তার ভ্রাতা রাবনের কাছে গিয়ে বলেন তাদের দুই ভাই ও সীতার কথা। তখন রাবন বোনের প্রতিশোধ নিতে ব্রাম্মন সেজে সীতাকে হরণ করেন। তারপর রাম, লক্ষন, রাজা বালি, হনুমান ও তাদের দল নিয়ে তারা রওনা দেয় লঙ্কায়। আবার ঐদিকে রাবনের ভাই বিভীষন রাবনকে বলেন যে সীতাদেবীকে রামের কাছে ফিরিয়ে দিতে। রাবন না শুনায় বিভীষন রামের দলে যোগ দেন। এবং বিভীষনের কথামত রামচন্দ্র রাবনের বংশসহ রাবনকে হত্যা করেন। পুরুষোত্তম রামচন্দ্রের মাতা পিতার প্রতি প্রেম, ন্যায়, আত্মত্যাগ এসবই এখনো আমাদের কাছে এক আদর্শ। 

পূর্ন অবতার শ্রীকৃষ্ণ : 

vishnu র পূর্ন অবতার হলেন শ্রীকৃষ্ণ। দ্বাপরযুগে ভ্রাতা বলরামের সাথে তিনি আবির্ভুত হন। আসলে শ্রীকৃষ্ণ কোনো অবতার নন। তিনি স্বয়ং ভগবান। তিনি সমস্ত অবতারের উৎস। এমনকি তিনি শ্রীবিষ্ণুরও উৎস। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ইশারা ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না। সমস্ত ব্রম্যান্ড তারই নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এবং তিনি সকল শক্তির উৎস। 

শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয় রাক্ষসরাজ কংসের কারাগারে। তার জন্মের দিনটিতে জন্মাষ্টমী উৎসব পালিত হয়। গীতায় বলা হয়েছে যে অধর্ম ও দুর্জনকে বিনাশ করতে ও ধর্ম ও সজ্জনকে রক্ষা করতে তিনি জন্ম নিয়েছেন। ধর্ম রক্ষা করার জন্যে তিনি অনেক অসুরদেরকে বধ করেন। এমনকি তিনি কংসকেও বধ করেন। 

শ্রীকৃষ্ণ দেবকীর গর্ভে জন্ম নিয়েছেন কিন্তু মাতা যশোদার কাছে তিনি লালিত পালিত হয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণ জীবদের শিক্ষা দিয়েছেন, বলেছেন ভালোবাসার মাহাত্মর কথা। মানবজাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। তিনি তার লীলার মাধ্যমে সর্বদাই জীবকুলের মঙ্গল করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ আবার দ্বারকার রাজাও ছিলেন। তার প্রজারা শ্রীকৃষ্ণকে ও তার ভ্রাতা বলরামকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। গীতা হলো সনাতনী হিন্দুদের একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত অমৃতবানি গীতার পথ আমরা আজও অনুসরন করি আর আগামীতেও জীবকুল অনুসরন করবে। 

বুদ্ধ অবতার : 

বুদ্ধ অবতার কলিযুগে অবতীর্ন হয়। vishnu অসুরি শক্তিকে বিনাশ করার জন্যে কলিযুগে আবির্ভুত হন। বুদ্ধদেবের পুরো নাম হলো গৌতম বুদ্ধ। এই গৌতম বুদ্ধই কিন্তু বুদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা। 

কল্কি অবতার : 

vishnu র দশম অবতার হলো কল্কি অবতার। ইনি এখনো আবির্ভুত হননি। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী কল্কি কলিযুগের শেষে অবতীর্ন হবেন। কল্কিকে বিষ্ণুর ভবিষ্যৎ অবতার মানা হয়। কলিযুগ যখন পাপে ভোরে যাবে তখন ঘোড়ায় চড়ে হাতে তরোয়াল নিয়ে কল্কি দুষ্টদের বিনাশ করবেন। কলিযুগে মানুষ যখন ধর্মের পথ ত্যাগ করবেন তখন কল্কিদেব এসে কলিযুগের অবসান ঘটাবেন এবং পুনরায় সত্যযুগের সূচনা করবেন। 

উপসংহার : 

আজকে Sanatan Sikkha র পোস্টে আপনারা যে (10 Avatars Of Lord vishnu) ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের কথা পড়লেন, তা পড়ে কি সত্যি আপনারা কিছু জানতে পেরেছেন ? আপনারা আমার এই পোস্টটি পড়ে কি উপকৃত হয়েছেন ? আমাকে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.